গত কয়েক দিনে মিরপুর স্টেডিয়ামের বাইরের দেয়ালে দর্শকদের লেখা বিভিন্ন বার্তার সবই সাকিবের বিরুদ্ধে। মিরপুরে তাকে দেখতে চান না এসব দর্শক। এই আবেগ প্রদর্শনের অধিকার দর্শকদের আছে বলে জানান ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে আগামী ১৬
অক্টোবর বাংলাদেশে আসবে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম টেস্ট দিয়ে সিরিজ শুরু হবে ২১ অক্টোবর
সিরিজ। এই টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বা মাঠের লড়াই নিয়ে তেমন আলোচনা নেই, আলোচনার
কেন্দ্রবিন্দুতে সাকিব আল হাসান। একটি প্রশ্ন সবখানে, ঘরের মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারবেন
তিনি!
এমন প্রশ্নের উত্তর সবারই জানা। বৈষম্যবিরোধী
ছাত্র আন্দোলনে নিহত গার্মেন্টসকর্মী হত্যা মামলায় সাকিবের নাম আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার
বিপক্ষে মিরপুরে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলার ইচ্ছার কথা জানানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা
নিশ্চয়তাও চেয়েছেন সাকিব। একইসঙ্গে নির্বিঘ্নে দেশে আসা-যাওয়ার নিশ্চয়তাও চান অভিজ্ঞ
এই অলরাউন্ডার।
বিষয়টি নিয়ে আগেও কয়েকবার কথা বলেছেন যুব
ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। কদিন আগে তিনি জানিয়েছিলেন, সাকিবকে সর্বোচ্চ
নিরাপত্তা দেওয়া হবে। রোববার মিরপুর স্টেডিয়াম পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে একই ধরনের
বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। আসিফ মাহমুদ জানান, দেশে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে সাকিবের আইনি কোনো
বাধা নেই। এ ছাড়া, প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না পেলে হত্যা মামলা থেকে তার নাম বাদ
যাবে।
ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, 'দেশে আসা কিংবা বাইরে
যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা তো থাকার কথা না। আমি যতোটুকু জানি। আর আইনের বিষয়টা আইন
মন্ত্রণালয় ব্যাখ্যা করতে পারবে। আমি বিশেষজ্ঞও না কিংবা আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও
না। আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদেরও কথা হয়েছে। আসিফ নজরুল স্যার ইতোমধ্যে বলেছেন হত্যা
মামলা যে হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না পেলে ওখান থেকে নাম বাদ পড়ে যাবে।'
সাকিবের দেশে আসার ক্ষেত্রে আইনি কোনো সমস্যা
দেখেন না আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, 'কোনো আইনি সমস্যা এখন পর্যন্ত নেই, এমনটা দেখা যাচ্ছে।
আইন তো আসলে আইনের মতো চলে। সেটা তো আমি বলতে পারবো না। আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আসিফ
স্যার একটা কথা বলেছে। তবে আমার মনে হয় বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্ট আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
এটা প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশে এতো বড় একটা অভ্যূত্থান হয়েছে। এরপর আসলে বিভিন্ন দেশে
যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে মানুষ আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল, জায়গাটা
ধরে রেখেছে। আমরা ওই ধরনের পরিস্থিতির দিকে আসলে এতো বেশি যাইনি। সবাই প্রত্যাশাও করছিল
খুব বাজে অবস্থা হবে।'
ছাত্র আন্দোলনে নিরব থাকায় গত ৯ অক্টোবর
ফেসবুকে নিজের অফিসিয়াল পেজে এক পোস্টে দুঃখ প্রকাশ করেন সাকিব, ব্যাখ্যা দেন রাজনৈতিক
অবস্থানেরও। বিষয়টি উল্লেখ করাসহ সাকিবের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা
বলেছেন, 'রাষ্ট্রের জায়গা থেকে প্রত্যেক নাগরিকেরই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের
দায়িত্ব। ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেটা আমরা নিশ্চিত
করবো।'
'আমি মনে করি যে আবেগের জায়গাটা অবশ্যই আছে।
যেহেতু বড় একটা আন্দোলন হয়েছে এবং সাকিব আল হাসান আগের ফ্যাসিবাদি সরকারের সঙ্গে জড়িত
ছিলেন। যেটা উনি পরিষ্কার করেছেন উনার পোস্টে। তারপরও কিছু আবেগ রয়ে গেছে। যৌক্তিক
বা অযৌক্তিক আমি ওই প্রশ্নে যাবো না। সেটা অন্য বিতর্ক।' যোগ করেন তিনি।
আবেগ বলতে গত কয়েক দিনে মিরপুর স্টেডিয়ামের
বাইরের দেয়ালে সাকিবকে নিয়ে সাধারণ দর্শকদের লেখা বিভিন্ন বার্তার কথা বলেছেন আসিফ
মাহমুদ। এসব দেয়াল লিখনের সবই সাকিবের বিরুদ্ধে। মিরপুরে তাকে দেখতে চান না এসব দর্শক।
এই আবেগ প্রদর্শনের অধিকার তাদের আছে জানিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, 'একজন ক্রিকেটার
তিনি খেলবেন এবং তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, আসার ক্ষেত্রে তো কোনো বাধা আমি দেখি না।'
'তবে যেটা দেয়াল লিখনের কথা বলছেন বা সোশাল
মিডিয়ায় কিছু দেখেছি, এটা তো আসলে আবেগের ব্যাপার। তাদেরও ওই অধিকার আছে। গণতান্ত্রিক
দেশ, সাংবিধানিক অধিকার যেকোনো ধরনের মুভমেন্ট বা যেকোনো কিছু করার। তবে এক্ষেত্রে
আমার ইয়ে থাকবে কারও নিরাপত্তা যেন হুমকির মুখে যেন না ফেলি।' বলেন তিনি।
আইনের প্রতি সবাইকে শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান
জানিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা আরও বলেন, 'যদি আইনগত কোনো বিষয় থাকে, আইন তো আইনের গতিতে চলে।
এ বিষয়ে তো আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। তো তবে নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল
হওয়া উচিত। যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকা আসবে, আমাদের পরিবেশটাও ভালো রাখতে হবে। না হলে বাইরের
দেশগুলো বাংলাদেশে খেলতে আসতে নিরাপত্তার অভাবটা অনুভব করবে।